১৯১৮ সালের 'স্প্যানিশ ফ্লু মহামারী' কবলে বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ও তাঁদের শিল্পকলা:
পর্ব - ১, দীপায়ন ঘোষ
বর্তমান মহামারীতে মানুষ থেকে মানুষের সংক্রমণ, গ্লোবাল ট্রানস্মিশন এবং ব্যাপক প্রাণঘাতের ক্ষেত্রে স্প্যানিশ ফ্লু ১৯১৮ সালের মহামারীর সাথে এক অস্বাভাবিক মিল পাওয়া যায়। ২-৩ বছর সময় কালে (ফেব্রুয়ারি ১৯১৮ - ডিসেম্বর ১৯২০) বিশ্বের প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মানুষ এই ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের আক্রান্ত হয়েছিল যা কিনা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ শেষ সময়ের আর প্রাণ হারিয়েছিল বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫ কোটি মানুষ। স্প্যানিশ ফ্লু ১৯১৮ ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারী হিসেবেও পরিচিত, এটি 'H1N1' ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের কারণে তৈরি একটি অস্বাভাবিক মারাত্মক ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারী ছিল। দাবি করা হয় ১৯১৮ সালের ফ্লু মহামারীটি 'স্প্যানিশ ফ্লু' হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল কারণ সময়টা ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের এবং যুদ্ধকালীন সেন্সর গুলি এই অসুস্থতার প্রতিবেদনকে ন্যূনতম করে দিয়েছিল যাতে সৈনিকদের মনোবল বজায় থাকে কিন্তু স্প্যানিশ সংবাদপত্রগুলি তা করেনি এই কারণে পরবর্তী সময়ে একে 'স্প্যানিশ ফ্লু' বলে প্রচার করা হয়।প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন যে অসুস্থতা এবং মৃত্যুর প্রথম পর্যবেক্ষণ গুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কানসাসে ১৯১৮ সালের মার্চ মাসে এবং তারপরে ফ্রান্সে জার্মানিতে এবং যুক্তরাজ্য এপ্রিল মাসের নথিভূক্ত করা হয়েছিল।
এবার আসি ভারতবর্ষে এই মহামারী কি প্রভাব ছিল
ভারতবর্ষের ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু মহামারী চলাকালীন প্রায় ১২ থেকে ১৩ মিলিয়ন মানুষ মারা গিয়েছিল সেপ্টেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসের মধ্যে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে ( "There was none to remove the dead bodies and the jackals made a feast") অর্থাৎ মৃতদেহগুলি শনাক্ত কার্য এবং অন্যত্র নিয়ে যাবার জন্য কোন মানুষ ছিল না এবং শেয়ালেরা তা দিয়েই তাদের ভোজ আয়োজন করেছিল। মহামারীর সময় ভারতবর্ষ ১৫০ বছর ধরে ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের অধীনে ছিল। ব্রিটিশ উপনিবেশিকদের ভাগ্য সবসময় ভারতীয় জনসাধারণের চেয়ে আলাদা ছিল এবং এই মহামারী তা আরও স্পষ্ট করে তুলেছিল, ফলস্বরূপ ধ্বংসাত্মক এই মহামারী ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের জন্য নিয়ে এলো এক প্রবল পরিবর্তন। ১৯১৮ সালের গোড়ার দিকে ভাইরাসটি পুরো আমেরিকান মিডওয়েস্ট জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং শেষে আটলান্টিক মহাসাগর পেরিয়ে পূর্বের দেশ গুলির দিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় নিযুক্ত সৈনিকদের সাথে ইউরোপের ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট এর প্রবেশের সাথে সাথে দুর্বল সৈন্যদের মধ্যে সংক্রমণ ঘটায় এবং যুদ্ধ শেষ হতেই বাণিজ্যিক শিপিং রুট এবং সামরিক পরিবহন উভয়ের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করে। মে মাসের শেষের দিকে এই ভাইরাসটি আজকের শহর মুম্বাই এ প্রবেশ করে। মহামারীটির প্রথম ঢেউ যখন এলো তখন এটি বিশেষভাবে মারাত্মক ছিল না, সেপ্টেম্বর এর মধ্য থেকে গল্পটি বদলাতে শুরু করে। বাণিজ্যিক ও নগরকেন্দ্রিক শহর অবস্থান হিসেবে মুম্বাই সংক্রমনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে এবং পরবর্তী সময়ে বাণিজ্যিক কারণে এবং ডাক রুট এর মাধ্যমে ভাইরাসটি সমগ্র উপমহাদেশের ছড়িয়ে পড়ে। (ভারতীয় সংবাদপত্র গুলি জানিয়েছিল প্রতিদিন শ্মশান থেকে দেড়শ থেকে দুইশ মরদেহ পাওয়া যাচ্ছে)। শেষ অব্দি ভারতের উত্তর ও পশ্চিম অঞ্চল গুলির মোট জনসংখ্যার ৪.৫% এবং ৬% শতাংশের মধ্যে মৃত্যুর হার দেখা গিয়েছিল। দক্ষিণ এবং পূর্বে এই সংক্রমণ ও মৃত্যু কিছুটা পরে প্রবেশ করে এখানে ১.৫% - ৩% শতাংশ ছিল মৃত্যুর হার। ডিসেম্বরের পর অবশ্য এই মহামারীর অবস্থার উন্নতি ঘটলেও ভারতীয়দের অবস্থার কোন উন্নতি ঘটেনি ১৯১৯ সালের বসন্তে অমৃতসরে ব্রিটিশদের নিশংসতা এবং এরপরই গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়।ইনফুয়েঞ্জা ব্রিটিশ অন্যায়ের আরো একটি উদাহরণ হয়ে ওঠে যা ভারতীয় জনগণকে তাদের স্বাধীনতা লড়াইয়ে আরও উৎসাহিত করেছিল।
বিশ্বজুড়ে মহামারীতে বিখ্যাত ব্যক্তিত্বরা :
বিশ্বজুড়ে এই মহামারিতে যে সকল বিখ্যাত ব্যক্তিত্বরা মারা গিয়েছিলেন যেমন - জার্মান পণ্ডিত ম্যাক্স ওয়েবার, অস্ট্রিয়ান চিত্রশিল্পী গুস্তাভ ক্লিমেট, এবং তাঁর ছাত্র চিত্রশিল্পী এগোন শিয়েলে এবং ফ্রেঞ্চ কবি গিলাইম অ্যাপোলিনায়ার (German scholar Max Weber, Austrian painter Gustav Klimet, and his student painter Egon Schille, and French poet Guillaume Apollinaire). আর সংক্রমণ হলে ও প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন বেশ কিছু বিশিষ্ট নাম যেমন - আমেরিকার প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন, ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লয়েড জর্জ, একজন বিশিষ্ট লেখক এবং শিল্পী যেমন- ফ্র্যাঞ্জ কাফকা এবং জর্জিয়া ওকিপ,কার্টুনিস্ট ওয়ার্ল্ড ডিজনি, চিত্রশিল্পী এডওয়ার্ড মঞ্চ এবং জন সিঙ্গার সার্জেন্ট (US President Woodrow Wilson, Franklin Roosevelt, British Prime Minister Lloyd George, prominent writers and artists such as Franz Kafka and Georgia O'Keefe, cartoonist World Disney, painter Edward Manch and John Singer Sergeant)।
To be continued...
No comments:
Post a Comment